রাজবাড়ী জেলার সবচেয়ে পুরাতন বসতির এলাকা হিসাবে পরিচিত কয়েকটি ইউনিয়নের মধ্যে মদাপুর ইউনিয়ন একটি। লোকমুখে প্রচলিত আছে এখানকার রাজ-রাজেশ্বরী মন্দিরের যে বট গাছটি রয়েছে তা প্রায় এক হাজার বছরেরও বেশী পুরাতন। সে সময় থেকেই এই বটগাছটির পূজা-অর্চনা হয় আসছে। অত্র ইউনিয়নের ইতিহাস সম্পর্কে যতটা ধারনা করা যায় তা থেকে জানা যায় এলাকাটি একটি হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা ছিল। প্রাচীন আদি বাসী সম্প্রদায়ের অনেক সম্প্রদায়ের লোকর বসবাস রয়েছে অত্র এলাকায়। এলাকার জনসাধারণের প্রধান পেশা কৃষি। সহজ সরল অত্র এলাকার লোকজন খুবই অতিথি পরায়ন। প্রকৃত বাঙালী ভাব ধারার লোকজনের বসবাস এই মদাপুর ইউনিয়ণ পরিষদের। অত্র ইউনিয়নে পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে চন্দনা নদী আর পূর্ব পাশ দিয়ে হড়াই নদী। এদুটি নদীই পদ্মা নদীর শাখা নদী হিসাবে বয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর হতে অত্র এলাকার যাতায়াতের প্রধান পথই ছিল নদী পথ বা জলপথ। নীচু এলাকা হওয়ায় বিল-বাওর-খাল জালের মত ইউনিয়নের মধ্যে ছড়িয়েছিল। দূর-দূরান্তে যাতায়াত করার জন্য নৌকা ব্যবহার করা হত। পদ্মা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত বলে প্রতি বছর এলাকা বন্যর প্রাদূর্ভাব দেখা দিত। ১৯৮৬/১৯৮৮ সালের ভয়বহ বন্যায় এলাকা ব্যাপক ক্ষতি হয়। কাঁচা রাস্তাঘাট যাও ছিল সম্পূর্ন বিলিন হয়ে যায়। পরবর্তীতে রাজবাড়ী জেলাকে বন্যার হাত থেকে রক্ষার জন্য পদ্মা নদী সংলগ্ন একটি বাঁধ এবং আরও একটি বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয় যা বর্তমানে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া মহাসড়কে পরিনত হয়েছে। বিকল্প বাঁধটি নির্মানের পর হতেই মূলত অত্র এলাকার রাস্তাঘাট অবকাঠামোগত উন্নয়ন সাধিত হয়। জেলা-উপজেলা শহর গুলোর সাথে নিবিড় যোগাযোগ স্থাপিত হয়। মদাপুর ইউনিয়ন পরিষদটি পূর্বে রাজবাড়ী সদর উপজেলার আধীন ছিল। পরবর্তীতে নবগঠিত কালুখালী উপজেলা আওতাধীন হওয়ায় প্রশাসনিক কাজ কর্মও জনগণের দোড়গোড়ায় চলে এসেছে। ধীরে ধীরে এলাকার জনগনের জীবন যাত্রার মান ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রভূত উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।